আইসিও- ফিউচার ইনভেস্টমেন্ট অ্যাপ্রেইজাল
ICO তথা Initial Coin Offering জিনিসটা বিশ্বব্যাপী ক্রমেই জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। বিশেষত টেক কোম্পানি বা বিভিন্ন স্টার্টআপে ফান্ডিং এর জন্য উন্নত বিশ্বে অনেক টেক উদ্যোক্তারা ICOর দিকে ঝুঁকছেন। যদিও বাংলাদেশে এরকম কিছু হচ্ছে না। হওয়ার কথাও না। ক্রিপ্টোকারেন্সির মত জিনিসগুলোর ব্যাপারে আমাদের তেমন কোন ভাল ধারণা নেই, এর ইউজ তো দূরের কথা। আর তাছাড়া আমাদের এখানে এক পাঠাও ছাড়া আর কোন স্টার্টআপ বড় কিছু করে দেখাতেও পারেনি। যদিও অবস্থার পরিবর্তন হচ্ছে। রিসেন্টলি দেখলাম একটা অ্যাপভিত্তিক কুরিয়ার সার্ভিস বড় অংকের বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে সক্ষম হয়েছে। কাজেই বলা যায় অবস্থার পরিবর্তন হচ্ছে এবং হবে।
যাইহোক ICOর ব্যাপারে একটু বলি। এটা হচ্ছে একটা বিনিয়োগ প্রসেস। অনেকটা শেয়ার মার্কেটের মত। তবে শেয়ার মার্কেটে ঢুকতে হলে অর্থাৎ বাজারে কোন একটা কোম্পানির শেয়ার ছাড়তে হলে কোম্পানিকে যেমন অনেক জটিল প্রক্রিয়া, অনেক আইন কানুনের মধ্য দিয়ে যেতে হয় ICOতে সেরকম না। ICO তে আপনি আপনার বিজনেস আইডিয়াটিকে হোয়াইট পেপারের মাধ্যমে প্রকাশ করে সরাসরি সাধারণ ইনভেস্টরদের কাছ থেকে টাকা তুলতে পারবেন।
ধরা যাক আপনার কাছে একটা ইউনিক বিজনেস আইডিয়া আছে। আপনি আপনার আইডিয়াটা নিয়ে কোন একটা ব্যাংক বা ইনভেস্টিং ফার্মের কাছে গেলেন। কিন্ত দেখা গেল তারা বিজনেসটা ভালভাবে বুঝল না (টেক স্টার্টআপের ক্ষেত্রে সাধারণত যা হয়) কিংবা রিস্কি ভেবে ইনভেস্ট করল না। কিন্ত প্রাথমিকভাবে বিজনেসটাকে দাড় করানোর জন্য আপনার ৫০ লাখ টাকা দরকার। এখন আপনি কি করবেন? ওয়েল... এক্ষেত্রে আইসিও হতে পারে আপনার সমাধান।
প্রথমে আপনাকে যেটা করতে হবে সেটা হচ্ছে আপনার বিজনেস প্ল্যানটাকে লিখিতভাবে একটা পেপার আকারে পাবলিশ করতে হবে। এই পেপারটাকেই বলে White Paper বা শ্বেতপত্র। এখানে খসড়া আকারে আপনার বিজনেস প্ল্যানটা সবার সামনে তুলে ধরবেন। যেমন আপনি কিভাবে কি করবেন, কত সময়ের মধ্যে বিনিয়োগকারীরা তাদের লাভ ফেরত পেতে পারে, লাভের পরিমাণ কেমন হবে ইত্যাদি।
এখন কোন বিনিয়োগকারী যদি দেখে আপনার বিজনেসটা লাভজনক তো তখন সে আপনার এখানে ইনভেস্ট করবে। কিন্ত এই ইনভেস্টটা সাধারণভাবে টাকা, ডলার বা অন্য কোন মুদ্রায় হবে না। এটা হবে ক্রিপ্টোকারেন্সিতে। (আবার একেবারে সব আইসিও তে ক্রিপ্টোকারেন্সিতেই লেনদেন হবে এরকমও না। অনেক আইসিও তে আপনি সরাসরি ক্যাশের মাধ্যমেও লেনদেনের সুযোগ থাকতে পারে)। যাইহোক ক্রিপ্টোকারেন্সি বলতে মেইনলি বিটকয়েন অথবা ইথার (ইথিরিয়াম) কে বোঝায়। কারণ অন্যান্য ক্রিপ্টোকারেন্সিগুলো স্টেবল না। (Although Facebooks Libra Could be a Real Game Changer)
যাইহোক আগেই বলেছি আপনার বিজনেসের জন্য ৫০ লাখ টাকা দরকার। এর জন্য আপনি ৫০ হাজার কয়েন বা টোকেন তৈরি করলেন। অর্থাৎ প্রতিটা কয়েন বা টোকেনের দাম হচ্ছে ১০০ টাকা করে। এই কয়েনটা বাস্তব কোন কয়েন না। পুরোটাই ভার্চুয়াল। অর্থাৎ পুরো জিনিসটাই আছে কম্পিউটারে, আপনার অ্যাকাউন্টে। এবং এর সরাসরি কোন মার্কেট ভ্যালু নেই। ইনভেস্টররা নিজেদের বিটকয়েন কিংবা ইথারের বিনিময়ে এই কয়েন পাবে। কোম্পানির ভ্যালু বাড়ার সাথে সাথে এই কয়েনের ভ্যালু বাড়বে। এবং পরে ইনভেস্টররা চাইলে এই কয়েন ফেরত দিয়ে বা অন্য কারো কাছে বিক্রি করে প্রফিট তুলে নিতে পারবে। মানে এটা হচ্ছে একটা ভার্চুয়াল শেয়ার মার্কেটের মত। এই হল মোটামুটিভাবে আইসিও।
ICOর সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে এই জিনিসটা টোটালি আনরেগুলেটেড। ক্রিপ্টোকারেন্সি জিনিসটাই একটা টোটালি আনরেগুলেটেড জিনিস। এর লেনদেনের জন্য যেহেতু কোন ব্যাংক বা অন্য কোন আর্থিক প্রতিষ্ঠানের দরকার নেই কাজেই আইসিওর জন্যও কোন রেগুলেশন নেই। যেকোনো কেউ চাইলে নিজের কোম্পানিকে আইসিও করে মার্কেট থেকে টাকা তুলে নিতে পারে যদি তার সেরকম ইনভেস্টর আকৃষ্ট করার সক্ষমতা থাকে। ২০১৭-১৮ তে এরকম অনেকগুলো ফেক আইসিও র মাধ্যমে স্ক্যামাররা বিনিয়োগকারীদের প্রচুর টাকা তুলে নিয়ে গেছে। অনেক দেশই এখন আইসিও কে রেগুলেশনের আওতায় আনার জন্য কাজ করছে। চায়না এবং সাউথ কোরিয়াতে আইসিও ব্যান করা হয়েছে।
আইসিওর এত সমস্যার পরও বিনিয়োগ কিন্ত থেমে নেই। ২০১৮ তে গ্লোবালি প্রায় ২০ বিলিয়ন ডলারের ইনভেস্টমেন্ট এসেছে আইসিও থেকে। এর কারণ হচ্ছে আইসিও তে লাভের পরিমাণ অসম্ভব বেশি।
বর্তমানে ২০২০ সালে Decentralized Finance (DiFi) চলছে। অনেক টোকেন বা কয়েন Decentralized Finance (DiFi) নাম লাগচ্ছে। তাই সর্তক থাকুন।