Post
Topic
Board Other languages/locations
Re: বাংলাদেশ (Bengali)
by
Bitcoin_people
on 23/08/2023, 04:52:56 UTC
আওয়ামী লীগ আমলে বাংলাদেশের বৃহৎ সব অর্থনৈতিক কেলেঙ্কারি

স্বাধীনতার ৪৭বছরে দেশের আর্থিক খাত অনেক দূর এগিয়ে গেলেও এ খাতে দেশে-বিদেশে আলোচিত অনেক কেলেঙ্কারির ঘটনাও ঘটেছে এ সময়ের মধ্যে। স্বাধীনতার পর প্রায় দেড় দশক পর্যন্ত ব্যাংক খাতের কেলেঙ্কারির ঘটনাগুলো ছিল মূলত রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংককেন্দ্রিক। ব্যাংক খাতের বাইরে দেশের অর্থনীতির আরেকটি বড় ক্ষেত্র শেয়ারবাজার। সেই শেয়ারবাজারেও ১৫ বছরের ব্যবধানে বড় দুটি কেলেঙ্কারির ঘটনা ঘটেছে। আর এই দুটি কেলেঙ্কারির ঘটনার সময়ই দেশের রাষ্ট্রক্ষমতায় ছিল আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন সরকার।

১৯৯৬ (হাসিনা সরকার) ১ম দফা শেয়ারবাজার কেলেঙ্কারি:

১৯৯৬ সালে যখন শেখ হাসিনা প্রথমবারের মত ক্ষমতায় আসে তখন ঐ বছরের শেয়ার বাজারে ঘটে মহা র্দূনীতি। যেখানে ৪০ থেকে ৬০ হাজার কোটি টাকা লুটপাট করা হয়। নভেম্বর-ডিসেম্বরে এই ঘটনা ঘটে। এই কেলেঙ্কারিতে যাদের নাম আলোচনায় আসে এবং যাদের নামে মামলা করা হয় তাদের মধ্য অন্যতম বেক্সিমকো গ্রুপের সালমান এফ রহমান ও আসিফ এফ রহমান। এছাড়াও রয়েছে, অলিম্পিক গ্রুপের মোহাম্মদ ভাই ও আজিজ মোহাম্মদ ভাই, টি কে গ্রুপের আবু তৈয়ব, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের সাবেক সভাপতি ও বর্তমান পরিচালক রকিবুর রহমান, ডিএসইর সাবেক পরিচালক মুসতাক আহমেদ সাদেক প্রমুখ। এ ছাড়া ’৯৬ সালের মামলায় অভিযুক্ত ব্যক্তিদের মধ্যে বেশ কয়েকজন মারা গেছেন। স্থায়ীভাবে দেশের বাইরে চলে গেছেন বেশ কয়েকজন।

২০১০ (হাসিনা সরকার) ২য় দফা শেয়ারবাজার কেলেঙ্কারি:
৮ ডিসেম্বর ২০১০, বুধবার সকাল ১১টা থেকে ১২টা ২৩ মিনিট পর্যন্ত সোয়া ঘণ্টায় শেয়ারবাজার থেকে কত টাকা হাওয়ায় মিলিয়ে গিয়েছিল তার পরিসংখ্যানে কেউ বলেছে ১৮ হাজার কোটি টাকা, কেউ বলেছে ২২ হাজার কোটি টাকা। আবার কারো কারো মতে ৮৬ হাজার কোটি টাকা। ডিসেম্বর মাসের ৮ তারিখের হিসাবের সঙ্গে এর আগের অন্তত ১৫ দিনের হিসাব মিলালে ৮৬ হাজার কোটি টাকা হাওয়া হয়ে যাওয়া বাস্তব ভিত্তি পায়। তবে সে ৮৬ হাজার কোটি টাকা, পরবর্তী সময়ে যাঁরা অভিযুক্ত হয়েছেন তাঁরা একা নিতে পারেননি। সে টাকা প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের পাশাপাশি ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের কাছেও গিয়েছে। ফর্মুলাটি ছিল নেই-দেই, নেই-দেই, নেই-দেই, নেই আর-দেই না। ৮ ডিসেম্বর এসে দেওয়ার কাজ শেষ হয়েছে। একবারে নিয়ে যাওয়া হয়েছে ২২ হাজার কোটি টাকা।

৩০ লাখ বিনিয়োগকারী সে টাকা নেয়নি, নিয়েছে পাঁচ থেকে ছয়জন ব্যক্তি। যাদের ছবি প্রকাশিত হয়েছে পত্রিকায়। তদন্ত প্রতিবেদনে তাদের নাম উঠে এসেছে। ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারী থেকে শুরু করে ডিএসই, সিএসই, এসইসি, সরকারের গোয়েন্দা সংস্থা সবাই নিশ্চিত হয়েছে পাঁচ-ছয়জন দুরাচারের বিষয়ে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, অর্থমন্ত্রী তদন্ত প্রতিবেদন হাতে পাওয়ার পরও বলেছিলেন, তাদের নাম প্রকাশ করা যাবে না; করলে অসুবিধা আছে। কী সেই অসুবিধা তা অর্থমন্ত্রী আজও বলেননি।
এদিকে ২০১০ সালে শেয়ারাবাজারে কেলেঙ্কারিতে ক্ষত তৈরি হয়েছিল দেশের অর্থনীতিতে। এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী ২০১২ সালের অক্টোবর সময়ের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) হিসেবে বাংলাদেশী মুদ্রায় এর পরিমাণ দাঁড়ায় ২ লাখ কোটি টাকার বেশি।

হলমার্ক গ্রুপ ঋণ কেলেংকারি:
আওয়ামী সরকারের পৌনে চার বছরের শাসনামলে রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংক শুধু হলমার্ক গ্রুপকে নয়, আওয়ামী প্রভাবে আরো অনেক অখ্যাত প্রতিষ্ঠানকে কমিশন, ঘুষ ও জালিয়াতির মাধ্যমে হাজার হাজার কোটি টাকা আত্মসাতের সুযোগ করে দিয়েছে। এ ধরনের অপরাধকর্মে কেবল ব্যাংকটির রূপসী বাংলা শাখাই নয়, অন্যান্য শাখাও নিয়োজিত থাকার খবর সংবাদপত্রসমূহে প্রকাশিত হচ্ছে। প্রকাশিত খবরে জানা যায়, রূপসী বাংলা শাখার পর সবচেয়ে বেশি অর্থ আত্মসাতের ঘটনা ঘটেছে এই ব্যাংকটির গুলশান শাখায়। বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশে সোনালী ব্যাংকের ঐ শাখায় এক বিশেষ নিরীক্ষা চালানো হয়। ঐ নিরীক্ষা প্রতিবেদন অনুযায়ী গুলশান শাখায় ৫১টি প্রতিষ্ঠানকে নিয়মবহির্ভূতভাবে ২৮১ কোটি ৪১ লাখ টাকা দেয়া হয়। শুধু সোনালী ব্যাংকই নয়, অন্যান্য ব্যাংকিং চ্যানেল ব্যবহার করেও এ ধরনের টাকা ডাকাতির ঘটনা এখন ফাঁস হচ্ছে। আওয়ামী সরকারের পৌনে চার বছরে ক্ষমতাসীন লুটেরা চক্র রাষ্ট্রায়ত্ত পাঁচ ব্যাংকের মাধ্যমে ১৫ থেকে ২০ হাজার কোটি টাকা লুটপাট করে নিয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। পত্র-পত্রিকায়ও লুটপাটের ফিরিস্তি ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হচ্ছে। এসব অর্থের একটি বড় অংশ গেছে ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের প্রভাবশালীদের পকেটে। বাকি টাকা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পাচার করা হয়েছে বলে আশংকা করা হচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তদন্ত প্রতিবেদনে এসব অর্থের বেশিরভাগই আর ফেরত পাওয়া যাবে না বলে সংশয় প্রকাশ করা হয়েছে।

পদ্মা সেতু পরামর্শক নিয়োগ কেলেঙ্কারি:
বাংলাদেশে বৃহত্তম অবকাঠামো প্রকল্প পদ্মা সেতুর তদারকির কাজ পেতে সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন, প্রধানমন্ত্রীর অর্থনীতি বিষয়ক উপদেষ্টা মসিউর রহমানসহ বেশ কয়েকজন প্রভাবশালী মন্ত্রী, রাজনীতিক ও প্রকল্পের সঙ্গে জড়িত কয়েক কর্মকর্তাকে ঘুষ দেয়ার প্রস্তাব দেয় কানাডীয় কোম্পানি এসএনসি-লাভালিন। এই অভিযোগ প্রমাণ হওয়ার পর ৩০০ কোটি ডলার ব্যয় সাপেক্ষ পদ্মা সেতু প্রকল্পে ১২০ কোটি ডলার ঋণ দিতে অস্বীকৃতি জানায় বিশ্বব্যাংক। এরপর অন্যান্য দাতা সংস্থা পদ্মা সেতুর ঋণচুক্তি বাতিল করে।

সোনালী ব্যাংকে সুরঙ্গপথে চুরি ও অর্থ কেলেঙ্কারি:
সোনালী ব্যাংকে সুড়ঙ্গ কেটে একই পদ্ধতিতে দুইবার চুরির ঘটনা ঘটেছে। প্রথম চুরির পরিমান ১৬ কোটি ৪০ লাখ টাকা। পরবর্তীতে চুরি হয় ৩২ লাখ ৫১ হাজার ৮৮৪ টাকা। সংশ্লিষ্টরা বলছে, ব্যাংক ব্যবস্থাপনায় দুর্বলতা, শৃঙ্খলা না থাকা, ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে অনিয়ম-দুর্নীতি, কর্মচারী কর্মকর্তাদের অদক্ষতা এবং সরাসরি দুর্নীতির সঙ্গে জড়িয়ে পড়া, রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ, নিরাপত্তায় ঘাটতি, সর্বোপরি ব্যাংক পরিচালনায় কোনো মনিটরিং না থাকায় বার বার অর্থ কেলেঙ্কারিতে পড়তে হচ্ছে রাষ্ট্রীয় এই ব্যাংকটিকে। এ ছাড়া ব্যাংকটির খেলাপি ঋণের পরিমাণ প্রায় ১২ হাজার কোটি টাকা। প্রতিটি লুটের ঘটনায় ব্যাংকের কর্মকর্তা- কর্মচারীদের সম্পৃক্ততা খুঁজে পাওয়া যায়। সোনালী ব্যাংকের দুর্নীতি আর অনিয়ম এমন একপর্যায়ে পৌঁছেছে যে, বেশ কয়েকটি ঘটনা দুর্নীতি দমন কমিশন এখনও তদন্ত করছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরি:
২০১৬ সালে অজ্ঞাতপরিচয় হ্যাকাররা ভুয়া ট্রান্সফার ব্যবহার করে নিউ ইয়র্ক ফেডারেল রিজার্ভ থেকে সুইফটের মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংকের ১০ কোটি ১০ লক্ষ ডলার অর্থ হাতিয়ে নেয়।। এর মধ্যে দুই কোটি ডলার চলে যায় শ্রীলঙ্কা এবং ৮ কোটি ১০ লক্ষ ডলার চলে যায় ফিলিপিনের জুয়ার আসরে। বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির ঐ ঘটনাকে এই মূহুর্তে বিশ্বের সবচেয়ে বড় ব্যাংক তহবিল চুরির একটি বলে ধরা হয়। ব্যাংকের কর্মকর্তাদের নিরাপত্তা অবহেলা অথবা ইচ্ছাকৃত যোগসাজশেই এই ভয়াবহ কেলেঙ্কারির ঘটনা ঘটে বলেও পর্যবেক্ষণে প্রমানিত হয়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সোনা কেলেঙ্কারি:
বাংলাদেশ ব্যাংকে জমা রাখা ৩ কেজি ৩০০ গ্রাম ওজনের সোনার চাকতি ও আংটি, তা হয়ে আছে মিশ্র বা সংকর ধাতু। ছিল ২২ ক্যারেট সোনা, হয়ে গেছে ১৮ ক্যারেট। শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের এক অনুসন্ধান প্রতিবেদনে এ ভয়ংকর অনিয়মের তথ্য উঠে এসেছে। দৈবচয়ন ভিত্তিতে নির্বাচন করা বাংলাদেশ ব্যাংকের ভল্টে রক্ষিত ৯৬৩ কেজি সোনা পরীক্ষা করে বেশির ভাগের ক্ষেত্রে এ অনিয়ম ধরা পড়ে। এদিকে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে সোনার হেরফের হয়নি। সোনা ঠিকই আছে। তবে তদন্ত করে যদি প্রমাণ পাওয়া যায় তাহলে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যাবস্থা নেয়া হবে বলে জানানো হয়েছে।

জনতা ব্যাংক ঋণকেলেঙ্কারি:
দুই প্রতিষ্ঠানকে সুবিধা দিতে গিয়ে ডুবতে বসেছে রাষ্ট্রায়ত্ত জনতা ব্যাংক। প্রতিষ্ঠান দুটি হলো—ক্রিসেন্ট গ্রুপ ও অ্যানন টেক্স গ্রুপ। ক্রিসেন্ট গ্রুপের ঋণ কেলেঙ্কারির কারণে ইতোমধ্যে ব্যাংকটির পুরান ঢাকার ইমামগঞ্জ ও মোহাম্মদপুর করপোরেট শাখার বৈদেশিক ব্যবসার লাইসেন্স (এডি লাইসেন্স) বাতিল করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এই দুই শাখায় এলসি খোলাসহ বৈদেশিক বাণিজ্য কার্যক্রম বন্ধ হওয়ার কারণে সংকটে পড়েছে পুরো ব্যাংকটি। এরফলে টাকা ধার করে ও মূলধন ভেঙেই এখন দৈনন্দিন কার্যক্রম চালাতে হচ্ছে ব্যাংকটির।
এদিকে, ক্রিসেন্ট গ্রুপের ঋণ কেলেঙ্কারির ঘটনাকে কেন্দ্র করে সম্প্রতি ব্যাংকটির দুই পরিচালককে অপসারণ করেছে সরকার। তারা হলেন—আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মানিক চন্দ্র দে ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক নির্বাহী পরিচালক আবদুল হক। ব্যাংকটির কর্মকর্তারা বলছেন, ক্রিসেন্ট গ্রুপ ও অ্যানন টেক্স গ্রুপ জনতা ব্যাংক থেকে বড় অঙ্কের ঋণ সুবিধা পেয়েছে। অথচ তারা ঋণের টাকা ফেরত দিচ্ছে না। উপরন্তু, অ্যাননটেক্স গ্রুপ ব্যাংকটি থেকে আরও টাকা চেয়ে আবেদন করেছে। টাকার জন্য প্রতিষ্ঠানটির মালিক ইউনূস বাদল সম্প্রতি অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের সঙ্গে সচিবালয়ে বৈঠকও করেছেন।
অ্যাননটেক্স গ্রুপের কাছে ব্যাংকটির ঋণ দাঁড়িয়েছে সাড়ে পাঁচ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে ২ হাজার ৬০০ কোটি টাকার ঋণকে খেলাপি তালিকাভুক্ত করার নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এছাড়া ক্রিসেন্ট গ্রুপের সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকার ঋণ খেলাপি তালিকাভুক্ত হয়ে গেছে। একই সময়ে ব্যাংকটির লোকসান হয়েছে ১ হাজার ৬০০ কোটি টাকা। এছাড়া ব্যাংকটির মূলধন ঘাটতি দাড়িয়েছে দুই হাজার ১৯৫ কোটি টাকা।

আমাদের বাংলাদেশে হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাট করে খেয়েছে এই সরকারের আমলে তাদের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ নেই বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের।

তথ্য সূত্র: যুগান্তর, প্রথমআলো, আমাদেরসময়, সাপ্তাহিক সোনার বাংলা ও অন্যান্য।
https://www.bdanalysis.com/archives/11812