আসসালামু আলাইকুম সবাই কেমন আছেন!
গতকাল রাতে প্রাণের শহর কক্সবাজার এসেছিলাম, সবকিছুই ঠিকঠাক ছিল। ছোট ভাই ভাগিনা ভাতিজা সবাই খুব এনজয় করছিল। যেহেতু ঈদের সময় তাই বিচে কোন বেঞ্চ পাচ্ছিলাম না। বাধ্য হয়ে সুগন্ধা বিচের যে ঝাউ বাগান, সেই বাগানেই রেস্ট নিতে শুরু করি। সেখানে মাদুর পেতে আমরা তিন চার জন শুয়ে প্রায় ঘুমিয়ে গিয়েছিলাম। আমার ব্যাগের নিচে আমার পাওয়ার ব্যাংক এবং মোবাইল ছিল। হুট করে একচোরে এসে আমার ব্যাগের নিচ থেকে মোবাইল এবং পাওয়ার ব্যাংক নিয়ে হাটা ধরে। কিন্তু ভাগ্যক্রমে আমি তাকে ধরে ফেলতে সক্ষম হই।
আসল ঘটনার শুরু এখানেই। তাকে ধরে ফেলার পর আশেপাশের যে ক্যামেরাম্যান গুলো ছিল তারা এসে বারবার চোরের পক্ষে সাফাই গাইতে থাকে। এক পর্যায়ে আমার সাথে থাকা ছোট ভাইদের মারধর শুরু করে। আমি জরুরি সেবা ট্রিপল নাইন এ ফোন দেই। তারা পুলিশ পাঠাচ্ছে বলে প্রায় এক থেকে দেড় ঘন্টা লেট করে। অবশেষে পুলিশ আসে। কিন্তু এখানেই শুরু আর এক নতুন কাহিনী। যদিও চোরকে আমরা কোন মারধর করিনি, তবু সে অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার ভান করে। পুলিশ বলে দ্রুত তাকে হসপিটালে নিয়ে যান আমরা আপনাদের পিছনে আসছি। কিন্তু আমাদের জানা ছিল না পুরাটাই একটা সিন্ডিকেট। যে অটোতে করে পাঠাইছে হসপিটালের জন্য সেই অটোওয়ালা ও সিন্ডিকেটের অংশ। আমাদের অটোর পেছনে পুলিশের গাড়ি আসার কথা ছিল, কিন্তু পুলিশ আসেনি, উলটো সেই চোরের ১০-১৫ জন লোক আমাদের পিছু নেয়।
একটু সামনে গিয়ে এসে অটোওয়ালা একটা গলিতে ঢুকিয়ে দেয়, যেহেতু আমরা চিনি না আমরা কিছু বুঝতে পারেনি। তারপর হুট করেই সে চোর নেমে দেয় দৌড়, যদিও এতোক্ষন সে সেন্সলেস ছিলো। আর সেই চোরের যেই ১০-১২ জন লোক গিয়েছে পিছনে তারা আমাদের মোবাইল এবার কেড়ে নিতে শুরু করে। সেখান থেকে কোন রকম আমরা দুজন পালিয়ে আসি। আর পুলিশের যে গাড়ি যাওয়ার কথা ছিল তারা আসলে যায়নি। বাংলাদেশের পুলিশের কাছ থেকে যে সেবা পেয়েছে এবং ৯৯৯ এর কাছ থেকে যে সেবা পেয়েছি, তা ভুলে যেতেই চাইবো।
যাহোক আপনারা নিরাপদে আছেন এটাই আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করেন। বাংলাদেশে ছিনতাই , কিডনাপিং মামুলি ঘটনা ভাই। এই সকল ঘটনার তদন্ত কোনদিনও হবে না। আপনাদের ঘটনা পড়ে আমার তিন-চার বাড়ির পাশে এক ছেলের ঘটনা মনে পরল। ছেলেটা এবার এসএসসি পরীক্ষা দেবে খুব একটা ভালো ছাত্র না এবং পারিবারিক অবস্থা খুব খারাপ। পরিবারে বড় ছেলে হওয়াতে ফ্যামিলিকে সাপোর্ট দেওয়ার জন্য ঢাকা মোহাম্মদপুরে একটি গার্মেন্টসে কাটিং মাস্টারের হেল্পার হিসাবে কাজ করে। ছেলেটা কাজকে খুব গুরুত্ব দেয় এমন কি যার অধীনে কাজ করে তাকেও খুব মান্য করে। বয়সে বড় কিন্তু বুদ্ধিতে কম এরকম একটি ওস্তাদের সাথে চলাফেরা করে। মোহাম্মদপুর সম্পর্কে কাউকে বিস্তারিত বলতে হবে এরকম প্রয়োজনীয়তা আছে বলে মনে করি না। বেচারা একটা মেসে থাকে যেখানে খুব কম দামে ভাড়া পাওয়া যায় এরকম জায়গায়। মাগরিবের নামাজের পর একটা গলি পথে হাঁটতে হয়।হাঁটতে হাঁটতে ছেলেটা কিশোর গ্যাংয়ের একটি আস্তানা পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় টোকাইদের মাদক সেবন করা দেখে ফেলে। কিশোর গ্যাংয়ের পোলাপান তাদেরকে ডেকে কাছে আসতে বলে তখন ছেলেটির ওস্তাদ যার পরিচয় হচ্ছে রংপুরের মফিজ টাইপের। কাছে না গিয়ে উল্টো দৌড় মারে এবং যে ছেলেটা সহজ সরল সেই ছেলেটা দৌড় না দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে এমনকি তাদের কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করে ভাই কেন ডাকলেন। তখন কিশোর গ্যাংয়ের পোলাপান ওস্তাদের দৌড় দেওয়ার কাহিনী জানতে চায়। আসলে ছেলেটা কিছুই জানেনা খুবই সহজ সরল কিন্তু দুঃখের বিষয় কিশোর গ্যাংয়ের পোলাপান ছেলেটাকে খুব মারধর করে । এমনকি এক চিপায় নিয়ে গিয়ে তার পিঠে ও পাছায় খুড় দিয়ে চার পাঁচটা পোজ দেয়। সাথে থাকা মোবাইল ফোন ও কিছু নগদ টাকাও ছিনিয়ে নেয়। ছেলেটা আশেপাশে দু চারজনের সাহায্য চাইলে কেউ তাকে সাহায্য করার জন্য এগিয়ে আসে না। ছেলেটার জবানবন্দী শুনে মনে হল এই বাংলাদেশে একটা ছেলে কতটুকু অসহায়। আশেপাশে মানুষকে ডাকলে মানুষ এমন ভাবেও দেখে না দেখার ভান করে যাতে মনে হয় কোন কিছুই ঘটেনি। অবশেষে ছেলেটি পুলিশের সাহায্য কামনা করলেও পুলিশ তাকে হাসপাতালে পৌঁছে দেয় কিন্তু অপরাধীদের ব্যাপারে বললে পুলিশ একটি কথাই বলে তাদেরকে আমরা কিছুই করতে পারবো না কেননা তাদের সংখ্যা বলে অগণিত। কিশোর গ্যাংয়ের অপরাধ সম্পর্কে এখানে বলে শেষ করা যাবে না।
যাহোক আপনারা নিরাপদে ভ্রমণ করতে পেরেছেন এটাই যথেষ্ট। আইন-শৃঙ্খলার পরিস্থিতির উন্নতি না হলে কোথাও ভ্রমণ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া ঠিক না। আমি অবশ্য নদীপথে শ্বশুর বাড়ি যাই তাতে করে মাঝেমধ্যে ডাকাতের আনাগোনার কথা শুনি কিন্তু এখন পর্যন্ত আল্লাহতালা এরকম খারাপ পরিস্থিতির মুখোমুখি করেননি এজন্য আল্লাহ তাআলার কাছে জানাই অসংখ্য শুকরিয়া। সবাইকে আল্লাহ তা'আলা হেফাজতে রাখুক এবং নিরাপদে যার যার কর্মস্থলে কর্ম করে খাওয়ার তৌফিক দান করুন।